আলম খান
সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক

.nd আলম খান, পুরো নাম খুরশীদ আলম খান। 22শে অক্টোবর, 1944 সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের কিংবদন্তি সঙ্গীত ব্যক্তিত্বদের একজন। তিনি ছিলেন একজন গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। তিনি 1982 সালে 'বড় ভালো লোক চিলো', 1985 সালে 'তিন কোনা', 1987 সালে 'আত্মসমর্পণ', 1992 সালে 'দিনকাল', 1999 সালে 'বাঘের থাবা' চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকারের পুরস্কার লাভ করেন। 2009 সালে 'এবাদত'। 'এবং 2010 সালে 'কি যাদু করিলা' বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত মোট 7টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছে, যা কোনো সুরকার বা সঙ্গীত পরিচালকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড।
জন্ম ও শৈশব:
আলম খান ১৯৪৪ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে স্বর্নপদক বিজয়ী একজন গ্র্যাজুয়েট। পরবর্তীতে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট এর এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ছিলেন। মা জোবেদা খানম ছিলেন সম্পুর্ন গৃহিণী। সিরাজগঞ্জে কিছুদিন থাকার পর বাবার চাকরি সুবাদে পরিবারের সবাই কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পরিবারের সাথে ফিরে এসে ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকে স্থায়ী হন ও পলাশী ব্যারাক স্কুলে ভর্তি হন। পরবর্তীতে আজিমপুর কলোনীতে দীর্ঘদিন বসবাস করেন ও ওনার শৈশবকাল বেড়ে ওঠে। এই আজিমপুর কলোনীতেই সঙ্গীতের প্রতি ওনার নিবীড় আগ্রহ জন্ম নেয়। সঙ্গীত শিক্ষার ও চর্চার প্রাথমিকস্তরে হারমোনিয়াম ও বেঞ্জো বাজানোর হাতেখড়ি নেন এলাকার গুনী সঙীতজ্ঞদের কাছে। ১৯৫৮ সালে কমলাপুর কবি জসীমউদ্দিন রোডে ওনার বাবা আফতাব উদ্দিন খান নিজে বাড়ি তৈরি করেন ও স্বপরিবারে বসবাস শুরু করেন। সে সময়ে তিনি সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে অধ্যয়ন শুরু করেন। উল্লেখ্য পাচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আলম খান মেজো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত রক গুরু শিল্পী আজম খান ছিলেন তার সেজো ভাই।
সঙ্গীত অনুশীলন এবং সঙ্গীত জীবন:
কবি জসীমউদ্দিন রোডে থাকাকালীন সময়েই সঙ্গীতের প্রতি তাঁর ঝোঁক আরো বৃদ্ধি পায়। সঙ্গীতকে পেশা হিসেবে নেয়ার ক্ষেত্রে বাবা আফতাব উদ্দিন খানের দ্বিমত থাকায় ওনার সঙ্গীত শিক্ষা ও চর্চার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। কিন্তু, মা জোবেদা খানমের উৎসাহে তিনি সঙ্গীতের চর্চা চালিয়ে যান। সঙ্গীতের প্রতি আলম খানের একনিষ্ঠ প্রেম ও গভীর আসক্তি বাবা আফতাব উদ্দিন খানের হৃদয়ে নাড়া দেয় এবং সঠিকভাবে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য একজন ওস্তাদের সরনাপন্ন হতে উপদেশ করেন। বাবার উপদেশ মোতাবেক, আলম খানের বন্ধু ছোটু মিয়ার মাধ্যমে ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জীর কাছে সঙ্গীতের তালিম নেয়া শুরু করেন। ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জীর সহকারী হিসেবে ‘পুনম কি রাত’ চলচ্চিত্রে সহকারী হিসেবে উনি চলচ্চিত্রাঙ্গানে পদার্পন করেন ও আলাউদ্দিন লিটল অর্কেস্ট্রায় যোগদেন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক আব্দুল জব্বার খানের ছেলে সঙ্গীত পরিচালক জাহাঙ্গীর হায়াত খান রুমু, গীতিকার মুকুল চৌধুরী, গোলাম দস্তগীর গাজী, গোপী বল্লভ বিশ্বাস ও ছোটু মিয়ার সমন্বয়ে ‘ঋতু শিল্পীগোষ্ঠী’ নামে একটি অর্কেস্ট্রা দল তৈরি করেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, মঞ্চ নাটকে, টিভি নাটকেও আবহসঙ্গীত সৃষ্টি করা শুরু করেন। ওনার আবহসঙ্গীত রচনায় প্রথম টিভি নাটক ছিলো ‘ভাড়াটে বাড়ি’। প্রখ্যাত সাংবাদিক, লেখক ও বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে কিংবদন্তী সংস্কৃত ব্যাক্তিত্ব আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সংশপ্তক’ নাটকের আবহসঙ্গীত রচনার মধ্য দিয়ে আলম খান দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে সারা ফেলে দেন। কিছুদিন পর মুকুল চৌধুরীর লেখা ও রওশন আরা মুস্তাফিজের গাওয়া ‘ও মাধবী গো’ গানটি টেলিভিশনে প্রচারের মাধ্যমে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবেও নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালে চলচ্চিত্রকার আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘কাচ কাটা হীরে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এককভাবে সঙ্গীত পরিচালনা শুরু করেন। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ও রুপা ফরহাদের কন্ঠে ‘জল তরঙ্গ মন আমার’ তাঁর সুরারোরোপিত প্রথম চলচ্চিত্রের গান।


সঙ্গীতজীবন, ব্যাস্ততা ও সফলতাঃ
আলম খানকে চলচ্চিত্রের গানে প্রথম পরিচিতি এনে দেয় কবির আনোয়ারের লেখা ও খুরশীদ আলমের গাওয়া স্লোগান চলচ্চিত্রের ‘তবলার তেরে কেটে তেরে কেটে তাক’ শিরোনামে গানটি, এরপর এ জে মিন্টু পরিচালিত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রে দেওয়ান নজরুলের লেখা ও এন্ড্রু কিশোরের কন্ঠে ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি মুক্তি পাবার পর একজন আধুনিক ও ব্যাতিক্রমী সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে তিনি সমাদৃত হতে শুরু করেন। ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সারেং বৌ’ চলচ্চিত্রের মুকুল চৌধুরীর লেখা ও আব্দুল জব্বারের কন্ঠে ওনার সুরারোপিত কালজয়ী অনন্য সৃষ্টি ‘ওরে নীল দরিয়া’ গানটি সারা বাংলাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এরপর একে একে ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত’ , কি যাদু করিলা, ‘হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস’ এর মতো বেশ কিছু গান সারাদেশের মানুষের মুখে মুখে খুব অল্পদিনের মধ্যেই তোলপাড় সৃষ্টি করে। চলচ্চিত্রে গল্প ও চিত্রনাট্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রোমান্টিক, স্যাড, আধ্মাত্বিক, ফোক, রকসহ সব ধরনের গানই সৃষ্টি করেছেন অনন্য এবং অনবদ্য সুরবৈচিত্র্যে। শুধুমাত্র গানের কারনেই একটি চলচ্চিত্র ব্যবসা সফল হতে পারে এমন দৃশটান্তের অন্যতম রূপকার ছিলেন তিনি যা, সিনেমা হলের দর্শকদের হৃদয়ে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছিলো।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে তার সুর করা ‘তিন কন্যা’ চলচ্চিত্রের "তিন কন্যা একই ছবি" গানের মাধ্যমে আলম খানই চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে ব্যাক করার সুযোগ করে দেন ভারতের নামকরা সঙ্গীতশিল্পী কুমার শানুকে।
অসংখ্য বিখ্যাত গানের তালিকায় সৈয়দ শামসুল হক, গাজী মাজহারুল আনোয়ার, মাসুদ করিম, শহীদুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, দেওয়ান নজরুল, মুকুল চৌধুরী, মোঃ রফিকুজ্জামান, মনিরুজ্জামান মনির, মুন্সী ওয়াদুদ, লিটন অধিকারী রিন্টু, মিল্টন খন্দকার, কামরুজ্জামান কাজল, কবির বকুলসহ সনামধন্ন গীতিকবিদের লেখনিতে প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, আব্দুল জব্বার, মোহম্মদ আলী সিদ্দিকী, আব্দুর রউফ, খুরশীদ আলম, ফাহিম হোসেন, রথীন্দ্রনাথ রায়, আজম খান, ফেরদৌস ওয়াহিদ, সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা লায়লা, রওশন আরা মুস্তাফিজ, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, প্রবাল চৌধুরী, এন্ড্রু কিশোর, নার্গিস পারভীন, রুলিয়া রহমান, শাম্মী আখতার, শাকিলা জাফর, শেখ ইশতিয়াক, কনকচাপা, খালিদ হাসান মিলু, বেবী নাজনীন, কুমার বিশ্বজিৎ, তপন চৌধুরী, সামিনা চৌধুরী, মনির খান, আসিফ, রিজিয়া পারভিন, ডলি সায়ন্তনী, রবি চৌধুরী, আগুন, বিপ্লব, পলাশ, আখী আলমগীর, ঝুমু খান, দীবাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন কন্ঠশিল্পীর কন্ঠে ওনার চলচ্চিত্র, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ও অডিও ক্যাসেটের জন্য সুরারোপিত সৃষ্টিগুলো চিরস্মরনীয় হয়ে থাকবে। এছাড়াও ভারতের কুমার শানু, হৈমন্তী শুক্লা, উষা ঊত্থুপ ও শ্রাবন্তী মজুমদারসহ বেশকজনের কন্ঠেও ওনার অনবদ্য সৃষ্টিগুলো চিরঅম্লান হয়ে থাকবে।


উল্লেখযোগ্য গানসমুহঃ
ওরে নীল দরিয়া, কি যাদু করিলা, তবলার তেরে কেটে তেরে কেটে তাক, ও মাধবী গোঁ, হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত, চাঁদের সাথে আমি দেবনা তোমার তুলনা, ডাক দিয়েছেন দয়াল আমারে, আমি চক্ষু দিয়া দেখতেছিলাম জগৎ রঙ্গিলা, তোরা দ্যাখ তোরা দ্যাখ দ্যাখ দ্যাখরে চাহিয়া, ভালবেসে গেলাম শুধু ভালবাসা পেলাম না, জীবনের গল্প আছে বাকী অল্প, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, কারে বলে ভালবাসা কারে বলে প্রেম, বুকে আছে মন, ওগো তুমি যে আমার কত প্রিয়, সবাইতো ভালবাসা চায়, প্রেম করেছ তুমি আর মন দিয়েছি আমি, তুমি যেখানে আমি সেখানে, তিন কন্যা একই ছবি, বান্দা তুলেছে দুহাত কবুল করো মোনাজাত, মনে বড় আশা ছিল তোমাকে শোনাবো গান, তুমি আছ সবই আছে, আমি তোমার বধু তুমি আমার স্বামী, তেল গেলে ফুরাইয়া বাত্তি যায় নিভিয়া, চোখ বুজিলে দুনিয়া আন্ধার, চুমকী চলেছে একা পথে, তুমি বলে ডাকলে বড় মধুর লাগে, আজকে না হয় ভালোবাসো আর কোনদিন নয়, দুনিয়াটা মস্ত বড়, আকাশেতে লক্ষ তারা, সবার জীবনে প্রেম আসে, বেলী ফুলের মালা পরে, মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবীতে আসে, মনে প্রেমের বাত্তি জ্বলে, তোমরা কাউকে বোলোনা, কে বলে আমি ভালো না, কি দিয়া মন কাড়িলা, মন্দ হোক ভালো হোক বাবা আমার বাবা, তুমি চাঁদের জোছনা নও, কালতো ছিলাম ভালো, দুই নয়নে তোমায় দেখে নেশা কাটেনা, এই জীবনতো একদিন চলতে চলতে থেমে যাবে, আমাকে দেখার সে চোখ তোমার কইগো, এইতো এই চলে গেল, পদ্মা নদীর তীরটি ঘেসে, ভালোবাসা দিয়ে মোরে এত সুখ দিয়েছো প্রভৃতি।

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রঃ
একের পর এক সঙ্গীত পরিচালনা করেন সারেং বৌ, বড় ভালো লোক ছিলো, রজনীগন্ধা, আশীর্বাদ, স্লোগান, স্মৃতিটুকু থাক, লাভ ইন সিমলা, কি যে করি, গুন্ডা, রাজরাণী, দোস্ত দুশমন, এমিলের গোয়েন্দাবাহিনী, মিন্টু আমার নাম, প্রাণসজনী, রাজদুলারী, আসামী হাজির, জীবন নৌকা, আরাধনা, সোনার চেয়ে দামী, মহেশখালীর বাঁকে, ঘরজামাই, কন্যাবদল, জবাব, বারুদ, বন্দুক, আওয়ারা, লড়াকু, ছোট মা, সখি তুমি কার, কথা দিলাম, যাদুনগর, বাঁধনহারা, প্রতিজ্ঞা, আলী আসমা, নাত বউ, দোস্ত দুশমন, নাগ পুর্নিমা, পিতা মাতা সন্তান, মান- সম্মান, দিনকাল, ভেজা চোখ, দুই জীবন, কেউ কারো নয়, অশান্তি, জনি, তিনকন্যা, সততা, ধর্ম আমার মা, মাইয়ার নাম ময়না, সারেন্ডার, ঘৃণা, দোলনা , গৃহবিবাদ, অচেনা, বাংলার বধু, বেপরোয়া, বাঘের থাবা, সত্যমিথ্যা, হৃদয়ের আয়না, শেষ ঠিকানা, বিশ্বপ্রেমিক, অন্তরে অন্তরে, ত্যাগ, এবাদত, কি যাদু করিলা, চাচ্চুসহ ২৯৭টি চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
অডিও ক্যাসেট ও সিডিঃ
অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সংগীতার ব্যানারে এন্ড্রু কিশোরের কণ্ঠে ‘ভালবেসে অপরাধী’ এবং ‘ভালো আছি’ শিরোনামে দুটি অডিও ক্যাসেট ও সিডিতেও সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন।
পুরস্কার ও সম্মান
চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ১৯৮৫ সালে ‘তিন কন্যা’, ১৯৮৭ সালে ‘সারেন্ডার’, ১৯৯২ সালে ‘দিনকাল’, ১৯৯৯ সালে ‘বাঘের থাবা’, ২০০৯ সালে ‘এবাদত’ ও ২০১০ সালে ‘কি যাদু করিলা’সহ মোট ৭বার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন, যা এখন পর্যন্ত কোন সুরকার বা সঙ্গীত পরিচালকের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এছাড়াও সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখার জন্য একাধিকবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি পুরষ্কার ও বাচসাস পুরস্কারসহ বহু বেসরকারী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে আজীবন সম্মাননা স্বীকৃতীসহ বহু সম্মাননা ও পুরষ্কারে ভুষিত হয়েছেন।
ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক জীবনঃ
আলম খান ১৯৭৬ সালে হাবিবুননেসা গুলবানুর সাথে তিবি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ওনার স্ত্রী মুলত গৃহিনী ছিলেন। উল্লেখ্য, আলম খানের সুরে মাসুদ পারভেজ পরিচালিত ‘জীবন নৌকা’ চলচ্চিত্রে সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গাওয়া "তুমি তো এখন আমারই কথা ভাবছো" গানটির গীতিকারও ছিলেন গুলবানু খান। তার বড় ছেলে আরমান খান এক্সময়ে জনপ্রিয় সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। বর্তমানে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত পাঁচ তারকা রিসোর্ট ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফের’ জি এম পদে দায়িত্বপালনসহ আরো কয়েকটি ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ডিরেক্টর পদে আছেন। ছোট ছেলে আদনান খান একসময়ে বাংলাদেশের সঙ্গীত অঙ্গনের অন্যতম ব্যাস্ততম রিদম প্রোগ্রামার ছিলেন। বর্তমানে ‘সেইন্টস আই লিমিটেড’ নামক ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেকটর সহ আরো কয়েকটি ব্যাবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ডিরেক্টর পদে দায়িত্বপালন করছেন এবং একমাত্র মেয়ে আনিকা খান বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। ব্যাক্তিগত জীবনে সঙ্গীতের কাজের অবসরে একজন সৌখিন ‘মৎস শিকারী’ ছিলেন। সুযোগ পেলেই’ হুইল ছিপ’ নিয়ে একান্ত সহাকারী গোপী বল্লভ বিশ্বাসকে নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডি লেক কিংবা মুগদা ঝিলে উনি প্রায়ই মৎস শিকার করতেন। এছাড়াও খেলাধুলার প্রতি ওনার বিশেষ ঝোক ছিলো। সুযোগ পেলেই তৎকালিন ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) ফুটবল খেলা দেখতে ছুটে যেতেন। আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সমর্থক ছিলেন। কাজী সালাউদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, শেখ মোহম্মদ আসলাম ওনার প্রিয় ফুটবলার ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলা টেলিভিশনে নিয়মিত দেখতেন।
শারীরিক স্বাস্থ্য ও পরলোকগমনঃ
আলম খান ২০১১ সালের মে মাসের শেষদিকে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। ৮ই জুলাই, ২০২২, শুক্রবার, সকাল ১১:৩২ মিনিটে, ঢাকার শ্যামলীতে বাংলাদেশ স্পেসালাইজড হসপিটাল লিমিটেড (বি এস এইচ এল) এ উনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ওনার প্রথম নামাজে জানাযা চ্যানেল আই প্রাঙ্গনে ও দ্বিতীয় নামাজে ওনার নিজ বাসভবনেড় সম্মুখে অনুষ্ঠিত হয়। প্রখ্যাত সুফী সাধক হযরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রঃ) এর নামানুসারে সিলেট অঞ্চলের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার মহাজেরাবাদের ‘জান্নাতুল ফেরদৌস কমপ্লেক্সের’ মসজিদুল আউলিয়া হযরত খাজা শাহ মোজাম্মেল হক (রঃ) এ তৃতীয় নামাজে জানাযার পর ‘জান্নাতুল ফেরদৌস’ কবরস্থানে ওনাকে দাফন করা হয়।
